সুইডেনে থাকলেও মনটা থাকে বাংলাদেশে
চিত্রনায়িকা তামান্নাকে তো অনেক দিন নতুন কোনো চলচ্চিত্রে দেখা যায় না। দেখা যাবেই কি করে, তিনিতো থাকেন সুইডেনে। তাহলে তার নতুন খবর কি?
পাঠকদের এমন প্রশ্নের জন্য তামান্নার সোজা উত্তর- ‘না, আমি প্রতিবারই দেশে ফেরার পর আমার পছন্দ অনুযায়ী ছবি পেলে সেটা দর্শকদের উপহার দেবার চেষ্টা করি। আর আমি সুইডেনে থাকলেও আমার মনটা সবসময় বাংলাদেশে পড়ে থাকে।’
চিত্রনায়িকা তামান্না এখন বাংলাদেশে। গত ৩১ অক্টোবর আবারো দেশে ফিরেছেন। এখন তিনি ডেন্টিস্ট। সুইডেনের একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে চাকুরি করছেন। ছুটি নিয়ে দেশে ফেরার পর নিজের চলচ্চিত্র ক্যারিয়ার ও ব্যক্তিগত জীবনসহ নানা বিষয়ে বাংলানিউজের পাঠকের জন্য কথা বললেন।
তামান্নার পুরো নাম তামান্না হাসিন হুদা। গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায় হলেও ঢাকায় বেড়ে উঠেছেন এ অভিনেত্রী। তিন ভাই-এক বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। ক্যারিয়ারের শুরু থেকে একটু আলাদাভাবে কাজ করেছেন তিনি। গতানুগতিক কোনো নায়িকার মত তাকে বড় পর্দায় পাওয়া যায়নি। সাইফুল আজম কাশেম পরিচালিত `ত্যাজ্যপুত্র` ছবির মাধ্যমে তামান্না প্রথম সিনেমার ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালেও তার অভিনীত প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি শহীদুল ইসলাম খোকন পরিচালিত `ভণ্ড `।
প্রথম ছবিতেই ব্যাপকভাবে সাফল্য পান এ অভিনেত্রী। ১৯৯৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এ ছবিটি সেসময় প্রায় ৫ কোটির টাকার ব্যবসা করে। আর এ ছবিতে তার বিপরীতে অভিনয় করেন রুবেল। এরপর টানা ২০০২ সাল পর্যন্ত বেশকিছু ছবিতে অভিনয় করেন।
তামান্নার অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবিগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘হৃদয়ে লেখা নাম’, ‘সন্ত্রাসী বন্ধু’, ‘কঠিন শাস্তি’, ‘তুমি আমার ভালোবাসা’, ‘মুখোশধারী’, ‘আমার প্রতিজ্ঞা’, ‘অশান্তির আগুন’ এবং সর্বশেষ এ বছর মুক্তি পায় মঈন বিশ্বাস পরিচালিত `পাগল তোর জন্য রে` ছবিটি।
তবে মজার ব্যাপার হলো ২০১১ সালে দেশে বেড়াতে এসে `পাগল তোর জন্য রে` ছবিটির প্রস্তাব পান তামান্না। দীর্ঘ বিরতির পর আবারো ছবিতে কাজ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ আমি ২০০৩ সালে সুইডেনে ফিরে পড়াশুনার প্রতি মনোযোগী হয়। টানা ডেন্টালের পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরি। আর মজার বিষয় হলো গতবার বেড়াতে এসেই ছবিটির প্রস্তাব পায় এবং অভিনয় করি।’
তামান্নার বিপরীতে মান্না, শাকিব খান, শকিল, ফেরদৌস, রুবেলসহ সমসাময়িক সব হিরো অভিনয় করেছেন। তবে চলচ্চিত্রে আসার আগে তামান্না আফজাল হোসেনের নির্দেশনায় ‘স্টারশীপ’এর একটি বিজ্ঞাপনের মডেল হন। এরপর তাকে চলচ্চিত্রের নায়িকা হবার জন্য প্রস্তাব দেন পরিচালক সাইফুল আজম কাশেম।
বাংলাদেশকে অনেক ভালোবাসেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আমি আমার দেশের মানুষ ও চলচ্চিত্রকে অনেক ভালোবাসি। আর আমি যখন বাংলাদেশ থেকে সুইডেনে চলে গেলাম তখন দেশীয় চলচ্চিত্রে অশ্লীলতার প্রবেশ ঘটে। তখন আমি চলচ্চিত্রে প্রস্তাব পেলেও কাজ করা বন্ধ করে দেই। আর আমার পরিবারের সবাই সুইডেনে থাকেন। তাই আমি চাইলেও দেশে এসে লম্বা সময় থাকতে পারিনা।’
এবার আসি অন্য প্রসঙ্গে। তামান্না কি বিয়ে করেছেন। এর উত্তরে তিনি বললেন, ‘ব্যক্তিগত জীবনের কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে চাই না। তবে পাঠকদের জন্য এটুকু বলতে চাই আমার জীবনে প্রেম এসেছে।’
দুইমাসের জন্য আসা এই চিত্রনায়িকা দেশে আসার পর থেকেই বেশ কিছু পরিচালকের নতুন ছবির প্রস্তাব পাচ্ছেন। তবে অ্যাকশন-ড্রামা ভিত্তিক গল্পের ছবিতে কাজ করতে ইচ্ছুক তিনি। নতুন কোনো ছবিতে কাজ শুরু করার আগে মা তাহমিনা হুদাসহ পরিবারের সবাইকে নিয়ে বান্দরবন, কক্সবাজার, বাগেরহাটসহ বেশকিছু জায়গায় বেড়াতে যাবেন তিনি।
বাইরে থাকলেও দেশের ছবি দেখা হয় তামান্নার। সবশেষ গিয়াসউদ্দিন সেলিমের ‘মনপুরা’ ছবিটি দেখেছেন। দেশে প্রিয় অভিনেতা-অভিনেত্রীর তালিকায় রয়েছেন রাজ্জাক, হুমায়ন ফরিদী, কবরী। পাশাপাশি হুগ গ্র্যান্ট, জুলিয়া রবার্টস, মাধুরী দীক্ষিতের অভিনয়ও তার ভীষণ প্রিয়।
বর্তমানে আমাদের দেশের ছবি নিয়ে তামান্না সবশেষে বললেন, ‘আমি আমাদের দেশের ছবির গল্পে একটি মেলোডি দেখতে চাই। দর্শক যেনো হলে গিয়ে একটু পরেই বুঝতে না পারেন, পরের দৃশ্যে কি হতে যাচ্ছে। এমন ছবির গল্পে অভিনয় করতে চাই। আর এখন ভালো ছবি হচ্ছে। আশা করছি, সামনে আরো ভালো ছবি দর্শকরা উপভোগ করবেন।’
তামান্নার সাথে আলাপচারিতার ফাঁকে ফাঁকে ছবি উঠানো শেষ করলেন আলোকচিত্রী নূর। বিদায় নেবার আগে সুইডেন থেকে আনা চকলেট হাতে দিয়ে বললেন, অনেক মজার চকলেট। নিন, খাওয়া শুরু করুন। আমি বললাম, আপনার কি চকলেট প্রিয়।
উত্তরে হেসে বললেন, না। আমি চকলেট খাই না....খাওয়াই!
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৮,২০১৩
এমকে/এসএফআই/জেসিকে
0 comments:
Post a Comment