আলোচনায় বসুন, সর্বদলীয় সরকার মেনে নিন: প্রধানমন্ত্রী
বাংলাকাগজ রিপোর্টঃ বিরোধী দলকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, হরতাল দিয়ে মানুষকে কষ্ট না দিয়ে আলোচনায় বসুন। সর্বদলীয় সরকার মেনে নিন।
মঙ্গলবার নওগাঁর পোরসায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় তিনি এই আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা দাবি করেন, দেশের মানুষ সুখে থাকলে বিরোধীদলীয় নেতা শান্তি পান না। এজন্য হরতাল ডেকে গাড়িতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ মারছেন।
তিনি বলেন, ‘বারবার ফোন দেয়ার পরও ন্যূনতম ভদ্রতা দেখিয়ে খালেদা জিয়া নিজে থেকে ফের দেননি। দেশের স্বার্থে আমি আবার ফোন দিয়ে উনাকে হরতাল প্রত্যাহার করার অনুরোধ করলেও তিনি রাখেননি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দুপুর ১টায় ফোন করলাম তাও তিনি ধরতে পারলেন না। তিনি ঘুমিয়ে ছিলেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখেন, এতো বেলা ঘুমিয়ে থাকলে দেশ চালাবেন কী করে।’
তিনি দাবি করেন, ‘বিএনপি একটা মিলিটারি ব্যাকড পার্টি। বিএনপি নেত্রীর ছেলে আমেরিকার ফেডারেল কোর্টে টাকাসহ ধরা পড়েছে। আবার ক্ষমতায় এসে টাকা বানানোর স্বপ্ন দেখছেন খালেদা জিয়া।’
এ সময় গত নির্বাচনের মতো আসন্ন নির্বাচনেও সবক’টি আসনে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করার আহ্বান জানিয়ে জনসভায় উপস্থিত জনতাকে হাত তুলে ওয়াদা করান আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় দেশের প্রতিটি খাতে উন্নয়ন হয়েছে। অন্যান্য দল ২৮ বছর দেশ শাসন করেছে। কিন্তু তারা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেনি। কারণ তারা নিজদের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে ব্যস্ত ছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণকে শান্তি ও সমৃদ্ধি দিয়েছে। দরিদ্র পরিবারের লাখ লাখ শিশু এখন শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে। গ্রামের মানুষ এখন ঘরে বসে স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ দেশকে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছে। আওয়ামী লীগ শাসনামলে জনগণের আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে তাদের ক্রয়ক্ষমতাও বেড়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণ এখন ডিজিটাল প্রযুক্তি ও সেলুলার ফোনের সুফল পাচ্ছে। কারণ আওয়ামী লীগ বিএনপির সুবিধাভোগীদের একচেটিয়া ব্যবসা ভেঙ্গে দিয়ে সেসুলার ফোন ও ডিজিটাল প্রযুক্তি জনগণের জন্য সহজলভ্য করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, মাত্র ১০ টাকায় হিসেব খোলার সুযোগ করে দিয়ে কৃষকদের ব্যাংক ঋণ দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এছাড়া ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে এ পর্যন্ত বর্তমান সরকার তিনবার সারের দাম কমিয়েছে। অন্যদিকে, সারের দাবি জানানোয় বিএনপি কৃষকদেরকে গুলি করে হত্যা করেছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ তবিবুর রহমান শাহ চৌধুরীর সভাপতিত্বে এ সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি, রাজশাহীর সাবেক মেয়র আ হ ম খায়েরুজ্জামান লিটন, নওগাঁ জেলা পরিষদের প্রশাসক ফজলে রাব্বি বকুল, আবদুল মালেক এমপি এবং সাধন চন্দ্র মজুমদার এমপিও বক্তৃতা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি মানুষের দৈনন্দিন জীবন থেকে শান্তি কেড়ে নিয়েছিল। তারা রাতে ঘুমাতে পারতো না। জঙ্গিবাদকে প্রশ্রয় দিয়ে তারা গোটা দেশে সন্ত্রাস ছড়িয়ে দিয়েছিল। ফলে বাংলাদেশ সন্ত্রাসের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নওগাঁ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত একটি স্থান। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পর এই এলাকায় সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল।
নওগাঁর উন্নয়নে তার সরকারের গৃহীত বিভিন্ন প্রকল্পের উল্লেখ করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের উন্নয়নে বিশ্বাসী। তাই, এই দল জনগণের কল্যাণে কাজ করে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসলে খাবার পানির সঙ্কট সমাধানের জন্য পদক্ষেপ নিবে। তিনি আরো বলেন, পোরশা ডিগ্রী কলেজ সরকারি করা হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি নেতারা তাদের ভাগ্য গড়েছেন এবং অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন। বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তাদের এসব অপকর্মের ঘটনা উদ্ঘাটিত করেছে যা জাতির জন্য একটি বিরাট লজ্জার বিষয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের জনগণ এখন শান্তিতে বসবাস করছে। সমস্যা কেবল বিএনপি নেতাদের। তারা প্রতিদিন মানুষ মারছেন। এতে ধারণা করা যায় যে, তারা মানুষ মারার দৃশ্য না দেখলে ঘুমাতে পারেন না।
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সংস্কার সাধন করেছে। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত এবং হেফাজত ইসলামী ইসলামের নামে পবিত্র কোরানের কয়েক হাজার কপি পুড়িয়ে দিয়েছে।
তিনি প্রশ্ন করেন, ‘যে দলের কর্মীরা পবিত্র কোরান পুড়িয়ে দিতে পারে তারা কি করে ইসলামের কথা বলতে পারে?’
সর্বদলীয় নির্বাচনকালীন সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহন করার জন্য বেগম জিয়ার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি জনজীবনে শান্তি বজায় রাখার স্বার্থে বিদ্যমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা দূর করার লক্ষ্যে তাকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছি। কিন্তু তিনি (বেগম জিয়া) কোন সাড়া দেননি বরং হত্যা, ভাংচুর ও ধ্বংসাত্মক পথ বেছে নিয়েছেন।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে জনগণের সমর্থন কামনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ দেশ স্বাধীন করেছে এবং এই দলটি দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আনতে পারবে।
তিনি বলেন, বিএনপি আবার ক্ষমতায় এলে দেশের খাদ্য উৎপাদন এবং জনগণের আয়-রোজগার কমে গিয়ে জনগণের দুর্ভোগ বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়তে চাই যেখানে সব ধর্মের মানুষ শান্তি ও সমৃদ্ধির মধ্যে জীবন যাপন করবে। তাই, আমরা এসব কাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্যে আপনাদের সমর্থন চাই।’
এর আগে প্রধানমন্ত্রী আমাইতাড়া-আগ্রাদ্বিগুণ সড়কে আত্রাই নদীর ওপর একটি সেতু, নওগাঁ টেঙটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট, নিয়ামতপুর উপজেলায় অডিটরিয়াম-কাম-কমিউনিটি সেন্টার, পোরশা উপজেলায় জেলা পরিষদ ডাকবাংলো, ৫০ শয্যা বিশিষ্ট পোরশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙ এবং মশিদপুর ইউনিয়ন পরিষদ ভবন উদ্বোধন করেন। তিনি নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালের ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ প্রকল্প, বটতলী জিসি-চৌবাড়িয়া জিসি সড়ক উন্নয়ন, নোচনাহার আর এন্ড এইচ সোমনগর-বড়গ্রাম-শিবপুর জিসি সড়ক উন্নয়ন, বারিন্দা সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা এবং অন্যান্য স্থাপনার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
0 comments:
Post a Comment