রামুর ঘটনার পুনরাবৃত্তির চেষ্টা সাঁথিয়ায়: নাগরিক প্রতিনিধিরা
তারা মনে করেন, ফেসবুকে মহানবীকে (সা.) নিয়ে কটুক্তির মিথ্যা খবর ছড়িয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের সম্পদ লুন্ঠন করতে চেয়েছিল একটি চক্র।
এটাকে সংকীর্ণ দলীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে না দেখে ঘটনার মূল হোতাদের খুজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তারা।
শুক্রবার সকালে পাবনা প্রেসক্লাবের মিলনায়তনে নাগরিক প্রতিনিধির ব্যানারে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এসব পর্যবেচক্ষণ তুলে ধরেন বক্তারা।
মতবিনিময় সভায় সাংবাদিক আবেদ খান বলেন, ভূয়া ফেসবুকের মন্তব্যকে কেন্দ্র করে একটি অজুহাত তৈরির মাধ্যমে রামুর ঘটনার পুনরাবৃত্তি চালানো হয়েছে পাবনার বনগ্রামের সংখ্যালঘূ সম্প্রদায়ের উপর।
“আমাদের পরিদর্শন ও তদন্তে পরিলক্ষিত হয়েছে, শুধুমাত্র জামায়াত-শিবির নয়, গোপন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িতরাও এই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল।”
ঘটনাটিকে ‘টেস্ট কেস’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, যদি তারা সফল হতে পারতো তাহলে শুধু পাবনা নয় সারা দেশে আজ আইনশৃংখলা পরিস্থিতি নাজুক থাকতো।
জ্যেষ্ঠ এই সাংবাদিক বলেন, এদেশে একটি অশুভ চক্র সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টা চালাচ্ছে। এটা নতুন কিছু নয়, নির্বাচনের আগে ২০০১ সালেও তারা এই ধরনের অপকর্ম করেছে। নির্বাচনের পরেও একই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল।
“আমরা এর পুনরাবৃত্তি চাই না। এর বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করতে না পারলে দেশ এগিয়ে যাবে না। রাজনৈতিক-অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতেই একটি গোষ্ঠি এই ধরনের কাজ করে আসছে।”
একই বিভাগের আরেক শিক্ষক কাবেরী গায়েন বলেন, বার বার এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না হয় সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।”
মতবিনিময় সভা থেকে সরকারের কাছে দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রকৃত জড়িতদের আটক করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়াসহ ৬ দফা দাবি পেশ করেন তারা।
দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- হামলায় ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ অতি দ্রুত নিরূপণ করা, ক্ষতিগ্রস্ত মন্দির ও ধর্মীয় উপাসনালয়গুলো রামুর মতো সরকারিভাবে মেরামত করা, গ্রেপ্তারের নামে নিরীহদের হয়রানি না করা, গ্রেপ্তার বাণিজ্য বন্ধ করা এবং নির্বাচন কেন্দ্রীক সহিংসতা রোধে আগাম ব্যবস্থা নেয়া।
মতবিনিময় সভার আগে সাঁথিয়ার বনগ্রামে হিন্দু বাড়ি ও উপাসনালয়ের উপর হামলার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন নাগরিক প্রতিনিধিরা।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত মহপরিদর্শক সত্যরঞ্জন বাড়ৈ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাজীব মীর ও সাংবাদিক সেলিম সামাদ।
শনিবার বনগ্রামের রাজিব সাহার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে মহানবী (স.) সম্পর্কে কটুক্তি করার গুজব রটিয়ে হিন্দুদের ঘড়বাড়িতে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা।
হামলার ঘটনায় রাজিবের বাবা বাবলু সাহা ২০ জনকে আসামি করে একটি মামলা এবং পরে পুলিশ বাদি হয়ে আরো দুটি মামলা করেন।
এপর্যন্ত পুলিশ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করলেও বাবলু সাহার দাবি, গ্রেপ্তারকৃতরা তার করা মামলার এজহারভুক্ত আসামি নয়। তবে পুলিশ বলেছে, এজহারভুক্ত আসামিদেরই গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
0 comments:
Post a Comment