Friday, November 8, 2013

মৃত্তিকার মেঘলা ভ্রমণ

৪০.

প্রিয় মৃত্তিকা

গত্তি আর অস্থি জয়ের পরে

ভাবি অলঙ্ঘনীয় আর কি কিছু আছে

আত্ম তৃপ্তির ঢেকুরে হৃদয় যখন পরিপূর্ণ

উদ্ভিন্ন হৃদয়ে যখন প্রস্ফুটিত হচ্ছে সারস অবয়ব

তখনই বেসুরো আলাপের মতো হাজির

খাটাস সময়, আমি পিছাতে পিছাতে

দিশা হারাই। দেখি সারসেরা নাগালের বাইরে

চলে গেছে, দৃষ্টির ঝাপসা

দৃশ্যপটে আমি থাকবো না

এই মর্মে চুক্তি হলে পূর্বাপর ঘটনা

অমূলক মনে হয়


আমার ক্ষণস্থায়ী অস্তিত্ব

মুছে গেলে পৃথিবীর ধারাবাহিকতার

কোনো হেরফের হবে না

নিশ্চিত হলে দাঁড়াই সংযুক্ত সড়কে

তীব্র গতির ধাবমান বাসে চড়ে পৌঁছাবো

শেষ স্টেশনে খালাসের আগে

লিখে রাখি অনুসরণ কর্ম, কালে

এটাই হয়তো হবো ট্র্যাজিক উপকথা...!


৪১

প্রিয় মৃত্তিকা

তৃষ্ণার লাল আস্তরণে কাগজ পৃথিবী

দ্রবীভূত হতে থাকলে

জলজ শামুক মুক্তার প্রয়োজনীয়তা উহ্য রাখে


জোঁকের রক্ত লোলুপ মুখে

তড়পানো মানুষের চামড়ায় লবণের

প্রলেপ দিতে হবে ভেবে কাদামাটির

লাঙল স্থগিত রেখে বঁধুয়া যায় চুনের খোঁজে


সন্তানের মোহে তেড়ে আসা স্নেহে

কুয়াশা জমলে ভাঙতি পয়সাগুলো ঘুরে

নাগরদোলায়, উপনিবেশিক ধারণায়

আলগুলো ছোট হতে থাকলে


পৌঁছানো হয় না মধু ও মননে

উটকো ঝামেলায় বিপর্যস্ত জীবন

এগারো শিকের বিছানায় কাতরায়


৪২.

প্রিয় মৃত্তিকা

একটা শার্টের ধারাবাহিক পরিধানে

হৃদয়ের সুতা ছিঁড়তে শুরু করলে

রিফুকর্ম কাল এগিয়ে আসে


সূঁচের সূচিকর্ম শিখবো বলে

আঙুলের নিবে রক্ত লিখেছি


গর্তগুলো একটু একটু করে ভরতে

প্রস্তুত হলে নীরবতায়

উপলব্ধি হয় প্রতিটি গর্তে তোমার

উন্মুখ মুখ, আঙুলের নিবে রক্তের বেদনা

আর বাড়াবো না ভেবে শার্টটিকে সযতনে

রেখে দেই সেলাইয়ের বাক্সে


শার্টের সূক্ষ্ম জমিনে

সূঁচের কামড় প্রয়োজনীয়তা হারিয়েছে

পুনর্জীবিত আঙুলে প্রতিধ্বনিত হয়

সাহসী জীবন কথা এবং যৌথ বাস।


৪৩.

প্রিয় মৃত্তিকা

পৃথিবীর প্রতিটি কোণে সময়ের বড় অসময় যাচ্ছে

জমাট বাঁধা শৃঙ্খলার ঢাকনায় মরচে পরেছে

গ্রহণের গলিত লিপ্সায় পুড়ছে ঋতুদের নদী

বিশ্লেষণ পর্ব অক্ষমতায় পর্যবেশিত হলে

নামাকার বিদগজরা কাগজের পরিমণ্ডল ছেড়ে

নিজেদের তত্ত্বকথা ওড়ায় ফালতু হাওয়ায়।


হাওয়া বদলের লোভে ইতর প্রাণী

ভুলেই গেছে নিদর্শন সময়, বেলাভূমির

বালুতে ইমারতের স্বপ্ন দেখানো কুশিল

বিদগজরা বায়ু কল্পনার খাবি খাচ্ছে

বংশগত দাস চামারেরা চর্ম জীবিকারও অধম

এদের পরিত্যাগই মঙ্গল, মানবতার মোহেই আঁটকা


মেঘের মোচড়ে আমাদের আত্মা আন্দোলিত হলে

তাদের ক্ষমা করে দেই, অনুভূতি প্রবণ বলেই আমরা মানুষ।


৪৪.

প্রিয় মৃত্তিকা

অতিশয় সংক্ষিপ্ত প্রশ্নে সংক্ষুব্ধ পঙ্গপাল

তেড়ে আসে, নিজস্ব জন্মের উত্তরে

তাদের দাঁড়ানোর কথা, ভাবার কথা

মাতৃ অস্বীকারত্বের কারণ আমলে নিয়ে

ঘটনা পরম্পরা বিশ্লেষণ করার কথা

সম্ভাব্য উত্তরে সঠিক টিক দিয়ে লুঙ্গির গিঁটে

নিজেদের জারজ চিহ্ন বেঁধে ফেলার কথা


চিন্তার কণারা অসীম হতে পারে, তাদের

ব্যাপ্তি বাধার প্রাচীর ডিঙিয়ে ব্যতিক্রমী

পাড়ায়ও পৌঁছায়, উদ্ভিন্ন বাক্যে বর্ণিত হতে পারে

জীবনের সারবত্তা অথবা একটা অনুদ্বিগ্ন সময়ের

প্রারম্ভকালে দৈবদুর্বিপাক অস্বীকারের

মোক্ষম সমাধান পাওয়া যেতে পারে

দুর্ভিক্ষে গ্রাসের সম্ভাবনার মাঝেও

পাওয়া যেতে পারে আবশ্যিক দ্রাঘিমাংশ


কুয়োর ব্যাঙের কাছে জলাধার পৃথিবী

ভিন্ন চিন্তায় তাই তাদের খড়গ উত্থিত

প্রশ্ন সহ্য হয় না বলেই শুয়োর প্রজাতি

নর্দমার খাদ্যে নিজেদের নাক ডুবিয়ে রাখে।


৪৫.

প্রিয় মৃত্তিকা

ধূসর সাইকেলে দূরত্ব অতিক্রমে প্রয়াসী হলে

উদ্বুদ্ধ নীল চিঠি ভিন্ন লিপি আওড়াতে থাকে

তরকারিতে পুদিনা সংযোগ কখন কার্যকরী হবে

আদৌ কার্যকরী হবে কি না

ভাবতে থাকলে মধ্য দুপুরের তপ্ত মাঠ

নিরাশার বার্তা পাঠায়, নীল লিপির মধ্যাংশে

আউট অব ফোকাস ছবিতে ভিন্ন কানের দুল

পরিলক্ষিত হচ্ছে।


পৃথিবীর ওপারে বাদামি বিকেল নামতে শুরু করলে

বাসনার রঙে গ্রহণ লাগে, কালচে সন্ধ্যা ফিরতি পাখিদের

গ্রাসে উদ্ধত হলে নীল লিপিকলা অবান্তর মনে হয়

সমুদ্রের ফেনা মিইয়ে গেলে ফিরে যায় সী-গল


ধূসর সাইকেল মুখ থুবরে পড়ে থাকলেও মার্জিত পাখি

গাঢ় সবুজ উদ্যানের প্রত্যাশায় নিজেকে জাগিয়ে রাখে।


বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৮, ২০১৩

টিকে/এসআরএস





  • Blogger Comment
  • Facebook Comment

0 comments:

Post a Comment

Copyright © 2012 দ্বিতীয় আলো All Right Reserved
Designed by CBTblogger