Wednesday, November 6, 2013

অনশনে অসুস্থ কুয়েটের ৭ শিক্ষার্থী

খুলনা: আমরণ অনশনে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের ০৯ ব্যাচের ৭ শিক্ষার্থী।


অসুস্থরা হলেন, ইমরান, জুবায়ের, আকাশ, শুভ, রাহুল, রিজন ও মানিক।


ক্লাসের দাবিতে বিভাগের ১১৯ শিক্ষার্থী প্রশাসনিক ভবনের সামনে মঙ্গলবার রাত ১০টা থেকে এ অনশন শুরু করেন।


বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় অনশনস্থল থেকে শিক্ষার্থীরা বাংলানিউজকে জানান, আমরণ অনশনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইমরান, জুবায়ের, আকাশ, শুভ, রাহুল, রিজন এবং মানিক বুধবার রাতে অসুস্থ হয়ে পড়েছে।


এর মধ্যে জুবায়ের এবং ইমরানকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল হলে স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বাকিদের সবাইকেই প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।


তাদের অভিযোগ, অনশন শুরু করার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন কিংবা কোনো শিক্ষক তাদের খোঁজ খবর নেননি, এমনকি দেখতেও আসেননি।


শিক্ষার্থীরা জানান, আন্দোলনরতদের কোনো ধরনের ক্ষতি হলে সব দায় দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং শিক্ষকদের নিতে হবে।


তারা আরও জানান, শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলনের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় খুলনা প্রেসক্লাবে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছে।


সংবাদ সম্মেলনে অনশনরত শিক্ষার্থীদের একটি টিম উপস্থিত থাকবে।


এদিকে, শিক্ষার্থীরা অনশনরত অবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন অভিভাবকরা। সন্তানদের নিয়ে সৃষ্ট দুশ্চিন্তায় তারা ক্যাম্পাসে ছুটে এসেছেন। তাদেরও দাবি, কর্তৃপক্ষ যেন দ্রুত ক্লাসের তারিখ ঘোষণা করেন।


এর আগে, শিক্ষার্থীরা রোববার ও মঙ্গলবার প্রশাসনিক ভবন ও পুরকৌশল বিভাগের সামনে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত প্রতীকী অনশন পালন করেন।


শিক্ষার্থীরা বাংলানিউজকে বলেন, দুই দিনের অনশনের সময় প্রশাসন আমাদের একের পর এক ক্লাসের তারিখ ঘোষণার আশ্বাস দেয়। এমনকি একাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠকসহ বেশ কিছু বৈঠকও করে।


আর এসব বৈঠক শেষেও প্রশাসন আমাদের ক্লাসের তারিখ ঘোষণা করতে পারেনি। পেরেছে কেবল প্রহসনমূলক রেজিস্ট্রেশনের তারিখ ঘোষণা করতে।


তারা আরও বলেন, মঙ্গলবার রাতে আমরা টের পাই প্রশাসন রাতের আঁধারে একাডেমিক ভবন থেকে অন্য বিভাগের ৭ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া পরীক্ষার খাতা সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। যাতে, আমরা প্রশাসনিক ভবন ঘেরাও করে রাখলেও তারা অন্যান্য বিভাগের পরীক্ষাগুলো চালিয়ে নিতে পারে।


প্রশাসনের এরকম কার্যকলাপ এবং আমাদের আন্দোলনের প্রতি তাদের শ্রদ্ধাবোধের অভাব দেখে মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ‘আমরণ অনশন’ কর্মসূচি শুরু করেছি।


শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা আমাদের দাবি অনুযায়ী স্পষ্টভাবে ক্লাসের তারিখ না পাওয়া পর্যন্ত এই কর্মসূচি অব্যাহত রাখবো।


তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো বিভাগে ক্লাস চালু না করেই রেজিস্ট্রেশন করার নজির নেই। কিন্তু ৪ নভেম্বর একাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠক ডেকে আমাদের মূল সমস্যার সমাধান না করে রেজিস্ট্রেশনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। যা রীতিমত শুভঙ্করের ফাঁকি।


জানা যায়, চলতি বছরের ৪ এপ্রিলে পুরকৌশল বিভাগের ০৯ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সেন্ট্রাল ভাইভা পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে কয়েকজন শিক্ষার্থী কুয়েট ক্যাম্পাস ও শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ইন্টারনেট, ব্লগ ও ফেসবুকে কটূক্তি করেন।


এ ঘটনার পর পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষকরা কর্মবিরতি ও অবিলম্বে মিথ্যা অপপ্রচারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবি জানান।


যার প্রেক্ষিতে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার হন কুয়েটের নয় শিক্ষার্থী। একই অভিযোগে আরো ১০ শিক্ষার্থীকে ভবিষ্যতে এই ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থাকতে সতর্ক করে দেওয়া হয়।


এর মধ্যে ৫ শিক্ষার্থী সেই ব্যবস্থার প্রেক্ষিতে হাইকোর্টে একটি রিট করে শাস্তির স্থগিতাদেশ করলে ৪ মে থেকে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য ওই বিভাগের সকল কার্যক্রম থেকে বিরত থাকেন শিক্ষকরা।


আর কুয়েট কাউন্সিল কর্তৃক শাস্তির সিদ্ধান্ত বহাল রাখার দাবিতে ৪ মে থেকে শিক্ষক সমিতির ব্যানার দীর্ঘদিন আন্দোলন চালিয়ে আসার পর ওই বিভাগের ৮ শিক্ষক তাদের অতিরিক্ত দায়িত্ব থেকে পদত্যাগও করেন।


এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের বৃহৎ স্বার্থে শিক্ষক সমিতি ১৯ আগস্ট তাদের কর্মসূচি স্থগিত করে পরীক্ষার কার্যক্রম পুনরায় চালু করে।


কিন্তু তখনও ০৯ ব্যাচের কেবলমাত্র এক শিক্ষার্থীর শাস্তির স্থগিতাদেশ মেনে নেননি শিক্ষকরা। আর এ কারণে তারা ১১৯ শিক্ষার্থীর ক্লাস নেননি।


বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর বাংলানিউজকে বলেন, সমস্যাটি সমাধানের জন্য কয়েক দফা বৈঠক করা হয়েছে। আশা করছি দ্রুত এর সমাধান হবে।


বাংলাদেশ সময়: ১০১৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ৭, ২০১৩

এমআরএম/টিকে/বিএসকে





  • Blogger Comment
  • Facebook Comment

0 comments:

Post a Comment

Copyright © 2012 দ্বিতীয় আলো All Right Reserved
Designed by CBTblogger