Saturday, November 9, 2013

এবার কুয়েত!

ঢাকা: সৌদি আরবের পর এবার কুয়েত থেকে ফেরত আসবেন প্রবাসী শ্রমিকরা। প্রতি বছর বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের এক লাখ কর্মী ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি।


মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশ আগামী ১০ বছরে ১০ লাখ শ্রমিক ফেরত পাঠাতে চায়। বিদেশিদের সংখ্যা কমিয়ে জনসংখ্যার ভারসাম্য তৈরির লক্ষ্যেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে কুয়েত সরকার।


কুয়েতের এই খবর বাংলাদেশি শ্রম বাজারের জন্য আবারও অশনিসংকেত হয়ে আসল। দীর্ঘ সাত বছর ধরে শ্রমবাজারটি বন্ধ থাকার পর বাজার খোলার পরিবর্তে এবার কর্মী ফেরত পাঠানোর মত দুঃসংবাদ এল দেশটি থেকে।


সম্প্রতি সৌদি আরব থেকেও কিছুদিন আগে বহু শ্রমিক ফেরত আসেন। দেশটির দেওয়া অ্যামনেস্টির সুযোগ নিয়েই ফিরে আসেন অনেকে। আর এ সময়ের মধ্যেও যারা বৈধ হতে পারেননি তাদেরকে আটক করে দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যস্থা করা হচ্ছে। গত ৩ নভেম্বর অ্যামনেস্টির মেয়াদ শেষ হলে পরদিন থেকেই অবৈধদের আটক অভিযান শুরু হয়। বৃহত্তম সৌদি আরবের শ্রম বাজারটিও এই মুহূর্তে বন্ধ রয়েছে।


আগামী ১০ বছরে কুয়েত থেকে ১০ লাখ বিদেশি কর্মী কমানো হবে বলে সম্প্রতি পার্লামেন্টে ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির শ্রমমন্ত্রী তিকরা আল রাশিদী। এ উদ্দেশ্যে কুয়েতে যেসব দেশ থেকে অধিক সংখ্যক কর্মী অবস্থান করছেন সেসব দেশ থেকেও বর্তমানে কর্মী নিয়োগ বন্ধ রেখেছে।


উল্লেখ্য, ভারত এবং মিশরের পর দেশটিতে বাংলাদেশি কর্মীদের সংখ্যা তৃতীয় সর্বোচ্চ।


জানা গেছে, কুয়েতের ৩.৮ মিলিয়ন জনসংখ্যার মধ্যে ২.৬ বিলিয়ন প্রবাসী, যা মোট জনসংখ্যার ৬৮ শতাংশ। তাই দেশটিতে বিদেশি কর্মীদের সংখ্যা কমিয়ে এনে ভারসাম্য তৈরিতে দেশটির শ্রম মন্ত্রণালয় বিশেষ কিছু পরিকল্পনা ও কার্যক্রম পরিচালনা করছে।


এদিকে কুয়েতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস মারফত জানা গেছে, কুয়েতের সমাজকল্যাণ ও শ্রম মন্ত্রণালয় ‘শ্রম আইন ২০১০’ এর আলোকে একটি পাবলিক অথরিটি ফর এক্সপেট্রিয়েট (পিএই) গঠনের কাজ করছে। এ অথরিটি বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবাসী জনবল নিয়োগের বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত হবে। তারা জনবল রিক্রুটিংয়ের বিষয়েও বিভিন্ন নীতিমালা নির্ধারণ করবে। তারা কুয়েতের শ্রম বাজারে বিদ্যমান স্পন্সর পদ্ধতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আনবে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।


এর ফলে ব্যক্তি স্পন্সরের পরিবর্তে কুয়েত সরকারই বিদেশি শ্রমিকদের স্পন্সর হিসেবে কাজ করবে। এতে করে কুয়েত ভিসা বেচার রীতি বন্ধ হবে।


কুয়েতস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস জানায়, দেশটির শ্রমবাজারে বাংলাদেশের কর্মীদের (বিশেষ করে পেশাজীবীদের) কাজের সুযোগ তৈরির বিষয়টি বহুলাংশে নির্ভর করছে অথরিটি ফর এক্সপেট্রিয়েট চূড়ান্ত হওয়ার ওপরে। এ বিষয়ে দূতাবাস কুয়েতের শ্রম মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করছে বলেও জানায় দূতাবাস সূত্র।


তবে কুয়েত থেকে কর্মীদের দেশে ফেরত পাঠানো ও শ্রমবাজারটির সর্বশেষ অবস্থা বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আবু হেনা মোস্তফা কামাল বাংলানিউজকে বলেন, আমরা এ বিষয়ে তেমন কিছু জানতে পারিনি। প্রতি বছর এক লাখ শ্রমিক ফেরত পাঠানো অনেক বড় একটি খবর। দেশটির মন্ত্রণালয় থেকে আমাদেরকে এখনো এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। জানতে পারলে কুয়েত কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চালানো হবে।


তিনি অবৈধ কর্মীদের কথা উল্লেখ করে বলেন, যদি অবৈধ শ্রমিক থাকেন, তবে তাদেরকে দেশে পাঠিয়ে দিতে পারে কুয়েত সরকার। তবে আশার কথা হল, সেখানে আমাদের অবৈধ শ্রমিকের পরিমাণ অনেক কম।


আবু হেনা মোস্তফা কামাল আরো বলেন, কুয়েতের শ্রমবাজার বাংলাদেশিদের জন্য বহুদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এ বন্ধ বাজার উন্মুক্ত করতে সরকার বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে। আমাদের প্রতিনিধি দল আগেও দেশটিতে গিয়ে আলাপ-আলোচনা চালিয়েছে। সেটা এখনও অব্যাহত রয়েছে।


খুব শিগগিরই আরো একটি প্রতিনিধি দল কুয়েত সফর করবেন বলেও জানান মোস্তফা কামাল।


প্রসঙ্গত, ২০০৬ সালের অক্টোবর থেকে কুয়েত বাংলাদেশের শ্রমিক নিয়োগ করছে না। বাংলাদেশ তখন থেকেই শ্রমবাজারটি খোলার বিষয়ে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ প্রক্রিয়ায় কয়েকটি ভিভিআইপি সফরও হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একবার, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান দুইবার এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি একাধিকবার কুয়েত সফর করেছেন। এত্যেক সফরেই দেশটির আমির, ক্রাউন প্রিন্স, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, শ্রমমন্ত্রীসহ অন্যান্য শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে অধিক সংখ্যক বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।


বাংলাদেশ সময়: ০৮৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১৩

জেপি/এএসআর/বিএসকে





  • Blogger Comment
  • Facebook Comment

0 comments:

Post a Comment

Copyright © 2012 দ্বিতীয় আলো All Right Reserved
Designed by CBTblogger