Tuesday, November 5, 2013

তারেকের আশা ছাড়তে নারাজ তৃণমূল বিএনপি

ঢাকা: দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির চাপে সহসাই দেশে ফিরতে পারছেন না বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। কিন্তু পরিস্থিতি যাই হোক, তারেকের না ফেরার বিষয়টি একেবারেই মানতে নারাজ দলটির তৃণমূল নেতা-কর্মীরা।


এ বিষয়ে বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, গত কমাস ধরেই দলের ভেতরে গুঞ্জন ছিল এবারের নভেম্বরেই তারেক দেশে ফিরে আসছেন। এমন আশায় ছিলেন দলের নেতা-কর্মীরাও। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের সেই আশা পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে এসেছে।


বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো বলছে, সামনের সময়গুলোতে কঠোর আন্দোলনের ফলাফলের ওপর নির্ভর করবে তারেকের দেশে ফেরার দিনক্ষণ। নির্বাচনের কাঙ্ক্ষিত পরিবেশ তৈরি হলেই ফিরবেন তারেক।


সূত্র মতে, বর্তমান সরকারের চলতি মেয়াদে ফেরার সুযোগ নাও পেতে পারেন তারেক। আর এ বিষয়ে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মধ্যে আপত্তি সবচেয়ে বেশি। কারণ সরকারের জন্য তারেক একটি আতঙ্ক বলে সংশ্লিষ্টরা অভিমত দিয়েছেন।


দলটির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য নাম না প্রকাশ করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, রাজনীতির এমন দোদূল্যমান পরিস্থিতিতে তারেকের দেশে ফেরাটা দলের শক্তি হাজার গুণ বাড়িয়ে দেবে। এমনটাই মনে করছেন দলটির সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা।


তাই যত ঝুঁকিই থাকুক না কেন, তারা তারেককে দেশে দেখতে চান। এ নিয়ে নানা প্রশ্নের জবাব দিতে হয় জ্যেষ্ঠ নেতাদের। বর্তমান সরকারের মেয়াদে তারেককে ফেরত আনতে চান না বলেও জানালেন দলের সর্বোচ্চ এ নেতা।


তিনি বলেন, তারেকের ফেরাটা সরকারের জন্য বাড়তি পাওয়া হবে। সরকার সর্বশক্তি দিয়ে তারেককে রাজনৈতিকভাবে কাবু করতে চাইবে। যা দলের জন্য এ সময় হীতে-বিপরীত হতে পারে।


দলের নীতি-নির্ধারক মহলের এক সদস্যও একই ধরনে অভিমত দিয়েছেন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, টানা ৬০ ঘন্টা হরতালে আমরা সফল। ১৮ দলের শক্তির নজির সরকার দেখেছে।


আবারও কর্মসূচি আসছে। এ সময় তারেক লন্ডনে থেকেই সবকিছু নজরদারি করছেন। দেশে এসেই অংশ নিতে হবে এমন তো কোনো কথা নেই। তার এখন দেশে ফেরা মানেই আটক হওয়া, জোটের মূল শক্তিতে ভাটা পড়া।

তৃণমূল প্রসঙ্গে এ নেতা বলেন, তারা তাদের আবেগের জায়গায় পুরোপুরি সঠিক। কিন্তু আপাতত আবেগ দিযে নয়, যুক্তি মেনে বুঝেশুনে পথ চলতে হবে।


দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের কেউ কেউ মনে করছেন, তারেক এখন ফিরলে দলের শক্তি না হয়ে দুর্বলতা হয়ে দেখা দিতে পারেন। কারণ তার বিরুদ্ধে চলমান মামলাগুলো সরকার আবারও চাঙ্গা করবে। এ নিয়ে তারেককে ব্যস্ততা ও হয়রানির মুখোমুখি হতে হবে। তারেককে অপদস্থ হতে দেখলে নেতা-কর্মীদের আন্দোলন এবং নির্বাচনী মনোবল ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কাও আছে।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের জ্যেষ্ঠ এক নেতা বাংলানিউজকে বলেন, যতদূর জানি, তারেক এখনো সম্পূর্ণ সুস্থ নন। স্বাভাবিক চলাফেরা ও প্রাত্যহিক কাজকর্ম সারছেন ঠিকই। কিন্তু দেশে ফিরে রাজনীতিতে তাকে যতটা সক্রিয় থাকতে হবে, সেই সুস্থতা তার এখনো আসেনি। আরও কিছুদিন বিশ্রামে থাকতে হবে তারেককে।


এ নেতা বাংলানিউজকে আরও জানালেন, তারেক তার মা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দলের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরামর্শ করেন। বিশ্বস্ত ভক্তদের মাধ্যমে দেশের খোঁজ খবর নেন প্রতিটি মুহুর্তে। দলের নেতাদের গতিবিধিও তিনি লক্ষ্য রাখছেন।


বিদেশে থেকেও দলের প্রতি এটি বড় ধরনের দায়িত্ব পালন। কিন্তু দেশে এলে তার দায়িত্ব হবে পুরোপুরি ভিন্ন। এসব ভেবেই তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে জোর দেওয়া হচ্ছে না বলেও জানালেন এ নেতা।


সদ্য দলের একটি সভায় যোগ দিতে নয়াপল্টনে আসা নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আলাপে দেখা যায়, তারেক ফিরলেই দেশের পরিস্থিতি বিএনপির অনুকূলে চলে আসবে বলে বিশ্বাস করছেন তারা। তাই চলতি নভেম্বরেই তারেককে দেশে দেখ‍ার জোর দাবি উঠেছে।


যুবদল নেতা গিয়াসউদ্দিন মামুন বাংলানিউজকে বলেন, তারেক রহমান দেশের মাটিতে পা রাখা মাত্রই পরিস্থিতি অন্যরকম হয়ে যাবে। তার দেশের ফেরার অপেক্ষায় আছে পুরো জাতি। তারেক রহমান আসা মানেই জোটের শক্তি শতগুণ বেড়ে যাওয়া। যখন তার ফেরাটা ভালো হবে, তখনই তিনি ফিরবেন বলে আমরা জ‍ানি।


নারায়ণগঞ্জের যুবদল-কর্মী সানাউল্লাহ শিপন বাংলানিউজকে বলেন, তারেক রহমানকেই এখন প্রয়োজন। মামলা থাকুক, যাই থাকুক, তিনি দেশে এলে সব ঠান্ডা। তাই দেরি করে লাভ কী?


একই রকম দৃঢ়তায় স্বেচ্ছাসেবক নেতা আক্রামুজ্জামান খান টুকন বাংলানিউজকে বলেন, যখনই তিনি দেশে ফিরবেন, আমাদের শক্তি একশ গুণ বেড়ে যাবে। তার অপেক্ষাতেই আছি আমরা সবাই। যখন তিনি ঠিক মনে করবেন তখন অবশ্যই ফিরবেন।


তারেকের ঘনিষ্ঠ একজন বাংলানিউজকে বলেন, তারেক নভেম্বরে হয়তো আসবেন না। তবে সরকার থাকাকালে আসবেনই না-এমন কথা নিশ্চিত করে বলা যায় না। একটি নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে পড়ে থাকার কিছু নেই। পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত বদলও হতে পারে।


বিএনপি সূত্রের দাবি, শুধু তৃণমূল নয়, দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের অনেকেই তারেকের ফেরার দিন গুনছেন।


এসব শীর্ষ নেতারা মনে করেন, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির দ্রুত পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মেলানোর চেষ্টায় ব্যস্ত নেতারা। দেশবাসী উৎকন্ঠা আর সংশয়ে দিন কাটাচ্ছেন। এমন সময় তারেক তাদের জন্য নতুন আশ‍া হয়ে উঠতে পারেন। যা দলের জন্য সুফল বয়ে আনবে।


সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, দূরে থাকলেও গত বছরগুলোতে তৃণমূলের অনেকের সঙ্গেই বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ রেখেছেন তারেক।


২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির জয়কে তৃণমূলের সঙ্গে তারেকের সুসম্পর্কের সুফল বলে বিশ্লেষণ করেছেন অনেকে। এবারও দলটি সেই নীতিতে চলতে চায় বলে ভিন্ন সূত্রের দাবি।


প্রসঙ্গত, বর্তমানে তারেক রহমান উন্নত চিকি‍ৎসার উদ্দেশ্যে লন্ডনে অবস্থান করছেন। তার সঙ্গে স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমান ও কন্যা জায়মা রহমানও আছেন।


কিছুদিন আগে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর লন্ডন সফর যান। অনেকেই বলাবলি করেছেন, তার সেই সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল তারেককে দেশে ফেরানোর বিষয়ে আলোচনা।


অবশ্য ফখরুল ইসলাম দেশে ফিরে এ বিষয়ে সরাসরি কিছু বলেননি। শুধু সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, পুরোপুরি সুস্থ হলে তবেই দেশে ফিরবেন তারেক।


বাংলাদেশ সময়: ০৪০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৬, ২০১৩

এসকেএস/এসএইচ/আরআইএস



  • Blogger Comment
  • Facebook Comment

0 comments:

Post a Comment

Copyright © 2012 দ্বিতীয় আলো All Right Reserved
Designed by CBTblogger